ছবি কবিতার ব্যাখ্যা ও মূলভাব
উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রথম পত্রের কবি আবু হেনা মোস্তফা কামালের রচিত ছবি কবিতার ব্যাখ্যা ও মূলভাব নিচে দেওয়া হলো।
‘ছবি’ কবিতাটি কবি আবু হেনা মোস্তফা কামালের ‘আপন যৌবন বৈরী’ কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে। এটি কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ। ছবি কবিতার ব্যাখ্যা নিচে দেওয়া হলো।
ছবি কবিতার মূলভাব
“ছবি” কবিতাটি আবু হেনা মোস্তফা কামালের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘আপন যৌবন বৈরী’ থেকে সংকলিত হয়েছে। এ কবিতায় রোমান্টিক কবি নতুন স্বাধীনতাপ্রাপ্ত বাংলাদেশকে মহান শিল্পীর তুলিতে আঁকা একটি কালজয়ী ছবি হিসেবে কল্পনা করেছেন। কবি নিপুণ শব্দের ছবি এঁকে বুঝিয়ে দেন ত্রিশ লক্ষ খাঁটি বাঙালি-শিল্পী তথা শহিদের দীর্ঘ নয় মাসের শ্রমে-আত্মদানে সৃজিত হয়েছে এই ছবি। তাঁর নিশ্চিত ধারণা, রঙের জাদুকর শিল্পী ভ্যান গগ ও ছবিটিতে ছড়ানো রঙের আশ্চর্য গাঢ়তা কখনো দেখেননি। কবি মনে করেন, ছবিটিতে ব্যবহৃত অসংখ্য নরমুণ্ডের ব্যবহার ত্রিশ লক্ষ শহিদের আত্মদানের সংগ্রামী চেতনাকে ধারণ করে আছে, যা এই ছবির মতো দেশটির গৌরবময় স্মারক। ত্রিশ লক্ষ শহিদের রক্তস্নাত সুন্দর এই দেশ পরিদর্শনের জন্য কবি বিদেশিদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন কবিতায়।
কবিতাটি গদ্যছন্দে রচিত। গদ্যছন্দে কোনো সুনির্দিষ্ট পর্ব ও মাত্রাসাম্য থাকে না।
ছবি কবিতার ব্যাখ্যা
এ কবিতায় কবি তাঁর মাতৃভূমি বাংলাদেশকে মহান শিল্পীর আঁকা একটি কালজয়ী ছবি হিসেবে কল্পনা করেছেন। সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত বাংলাদেশ রোমান্টিক এই কবির দৃষ্টিতে দৃষ্টিনন্দন এক চিত্রের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। এখানে শব্দের ইন্দ্রজাল রচনা করে কবিতাটির ভাবসত্যকে উন্মোচন করেছেন কবি।
কবির দৃষ্টিতে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশ লক্ষ শহিদই এ চিত্রের কারিগর। তাদের শ্রম ও আত্মত্যাগে গড়ে উঠেছে মাতৃভূমির নতুন চিত্রপট। কবির ধারণা, রঙের জাদুকর শিল্পী ভ্যান গগও এ ছবির মতো রঙের এমন আশ্চর্যরকম গাঢ়তা প্রত্যক্ষ করেননি। তিনি মনে করেন, ছবিটিতে ক্রমাগত নরমুণ্ডের ব্যবহার যেন ত্রিশ লক্ষ শহিদের আত্মত্যাগের সংগ্রামী চেতনাকে ধারণ করে আছে।
এটি ছবির মতো এদেশের গৌরবময় স্মারক। সংগত কারণেই ত্রিশ লক্ষ শহিদের রক্তস্নাত সুন্দর এই দেশ পরিদর্শনের জন্য বিদেশিদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তিনি।
নামকরণ: কবিতাটির বিষয়বস্তুকে কেন্দ্র করে।
রূপশ্রেণি: দেশপ্রেমমূলক কবিতা।
ছন্দ: কবিতাটি গদ্যছন্দে রচিত।
ভাষারীতি: চলিত ভাষা।
ছবি কবিতার প্রসঙ্গ
আবু হেনা মোস্তফা কামাল স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের অন্যতম কবি। সাহিত্যিক পরিচয়ের বাইরেও তিনি বিদগ্ধ শিক্ষক, গীতিকার, সমালোচক ও জনপ্রিয় উপস্থাপক ছিলেন। বিশেষ করে পঞ্চাশের দশকে তৎকালীন ঢাকায় সাহিত্য-সংস্কৃতির যে ভুবন তৈরি হয় আবু হেনা মোস্তফা কামাল ছিলেন সে পরিবৃত্তের একজন তরুণ সদস্য।
ক্ষণজন্মা এই কবি আপদমস্তক একজন ধ্যানী কবি এবং সংস্কৃতিপ্রেমী ছিলেন। স্বদেশপ্রেম, মানবপ্রেম, হৃদয়ের অন্তরঙ্গ অনুভূতির মিশেলে তাঁর কবিতা বিশিষ্টতা অর্জন করেছে। কবিতার নির্মাণশৈলীতে উপমা-রূপকের পরিশীলিত ব্যবহার আর ঐতিহ্য সচেতনতা তাঁর কবিতাকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। সমগ্র সাহিত্য জীবনে মাত্র তিনটি কাব্যগ্রন্থ রচনা করেছিলেন তিনি।
‘আপন যৌবন বৈরী’ তাঁর প্রথম এবং অন্যতম কাব্যগ্রন্থ। আলোচ্য ‘ছবি’ কবিতাটি এ কাব্যগ্রন্থ থেকেই সংকলিত হয়েছে। এ কবিতায় কবি তাঁর প্রিয় জন্মভূমিকে একটি অনন্যসাধারণ ছবি হিসেবে শিল্পিত করেছেন। মনোহারী এই ছবির সমস্ত উপকরণ অকৃত্রিম ও বিশ্বস্ত। বস্তুত, ত্রিশ লাখ শহিদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা এবং আত্মত্যাগে গড়ে উঠেছে এই ছবি অর্থাৎ স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ। সংগত কারণেই রূপকথার মতো সুন্দর এই দেশের চিত্রপট বিদেশিদের মুগ্ধ করবে বলেই কবির বিশ্বাস।